রাবিতে টানা শাটডাউন, ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৫ অপরাহ্ণ উত্তরা প্রতিবেদক
রাবিতে টানা শাটডাউন, ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে টানা পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন চলছে। গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। ফলে তৃতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, অচল হয়ে পড়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, পরিবহন মার্কেট, টুকিটাকি চত্বর ও আমতলাসহ শিক্ষার্থীদের আড্ডার স্থলগুলো ফাঁকা। অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচার দাবিতে শনিবার রাতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। আবার একই দাবিতে সব অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্চ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পাঁচটি দাবি জানায় ইউট্যাব। সংগঠনটির দাবিগুলো হলো-  হামলার সঙ্গে জড়িত সব চিহ্নিত সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে; তাদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; দোষী শিক্ষার্থীদের আসন্ন রাকসু নির্বাচনে স্থায়ীভাবে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রাকসু নির্বাচন করার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; শিক্ষকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিবৃতিতে ইউট্যাবের রাবি শাখা সভাপতি অধ্যাপক মামুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। অন্যথায় শিক্ষক সমাজ আরও কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য কমপ্লিট শাট ডাউনে যেতে বাধ্য হবে।’ এ ছাড়া আজ থেকে দাবি না মানা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে কর্ম বিরতিতে থাকবেন তারা।

এ দিকে আরেক বিবৃতিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে এই ছাত্র নামক সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার এবং ক্যাম্পাসের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা ও শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোড়ালো দাবি জানান। পূর্বের ধারাবাহিকতায় এই ছাত্র নামক সন্ত্রাসীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ (পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন) থাকবে।’

ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা : চলতি সপ্তাহে একদিনও কোনো বিভাগের ক্লাস হয়নি। গত রবিবার থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাট ডাউন চলমান রয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও একাংশ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং সামনের সপ্তাহে পূজার ছুটি থাকায় সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন।

কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী রিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'প্রথমত শিক্ষকরা শাট ডাউন দিয়েছে, আর রাকসুর জন্য থাকছিলাম কিন্তু নানা জটিলতায় রাকসু নির্বাচনও পিছিয়ে গেল। এ সপ্তাহে আর ক্লাস হবে কি না সিওর নাই। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি, একবারে পূজার ছুটি শেষে আসবো।'

একই সুরে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌসী। তিনি বলেন, 'ক্যাম্পাসে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা খুব সহজে সমাধান হবে বলে মনে হয় না। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বড় একটা অংশ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। সামনে পূজার ছুটি থাকায় ক্যাম্পাস অনেকদিন বন্ধ থাকবে। তাই আগেই চলে যাচ্ছি।'

পিছিয়েছে রাকসু নির্বাচন : পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন পেছানোর দাবি জানায় ছাত্রদলসহ কয়েকটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীরা। তবে এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বরই রাকসু নির্বাচনের দাবি জানায় শাখা ইসলামি ছাত্রশিবির। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার সন্ধ্যায় রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক শেষে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে তৎক্ষণাৎ বিক্ষোভ করে ছাত্রশিবির।

এদিকে রাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে পূর্ব ঘোষিত ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাকসুর নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার।

এর আগে গত শনিবার পোষ্য কোটা ইস্যুতে উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে পোষ্য কোটায় ভর্তি স্থগিত রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনার পরদিন থেকেই ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তার-কর্মচারীরা।

আরও পড়ুন.. শিক্ষা
← প্রচ্ছদ