পায়ের আঙুলের ছাপে এনআইডি পেলেন সেই জসিম

দীর্ঘ তিন বছর চেষ্টার পর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেলেন কলেজছাত্র জসিম মাতুব্বর (২৬)। জন্ম থেকে দুই হাত না থাকায় হাতের আঙুলের ছাপ দিতে পারছিলেন না তিনি। তাই তাকে দেওয়া যাচ্ছিল না এনআইডি।

রোববার (৫ অক্টোবর) বিকালে জসিমের মোবাইলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বার্তা এসেছে। এতে লেখা ‘অভিনন্দন জসিম মাতুব্বর, এটি আপনার এনআইডি নাম্বার।’

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা জসিম। জন্ম থেকে দুই হাত না থাকায় পা দিয়ে লিখে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। বর্তমানে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন জসিম। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি হাটে সবজি ও ফল বিক্রি করে নিজের ও পরিবারের খরচ চালান।

এদিকে জসিমের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে প্রয়োজন অনুভব করেন এনআইডি কার্ডের। এছাড়া এনআইডি না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হন তিনি।

বিষয়টি জানতে পেরে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন এগিয়ে আসেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনওর উদ্যোগে জসিমকে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তার পায়ের আঙ্গুলের স্বাক্ষর ও চোখের আইরিশ সংগ্রহ করা হয়। ইউএনওর সুপারিশসহ তথ্য পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এনআইডি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।

ইউএনও দবির উদ্দিন বলেন, জসিমের জীবনের গল্প জানার পর অনুপ্রাণিত হয়ে জানতে পারলাম, হাত না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের যোগ্যতায় এসএসসি, এইচএসসি পাশ করেছেন। তার মতো একজন মেধাবী তরুণ শুধু এনআইডি না থাকার কারণে যেন পিছিয়ে না পড়েন- সেটিই নিশ্চিত করতে চেয়েছি। নির্বাচন কমিশনের দ্রুত পদক্ষেপে তিনি এনআইডি পেয়েছেন। এটি আমাদের সবার জন্য আনন্দের।

এনআইডি পাওয়ার পর আবেগাপ্লুত জসিম মাতুব্বর বলেন, জন্ম থেকে দুই হাত না থাকার কারণে অনেক কষ্ট করেছি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও জাতীয় পরিচয়পত্র পাইনি। পড়াশোনা, ফরম পূরণ, পরীক্ষায় অংশ নেওয়াসহ সব জায়গায় বাধা আসত। আজ নিজের এনআইডি পেয়ে বেশ আনন্দ লাগছে।